
৩
রাত এগারোটা।
শো এখনও চলছে।তবুও নিলা আর আকাশ বের হয়ে আসে গেট দিয়ে।বাইরে ওদের জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে।সামনে যেতেই ড্রাইভার নেমে গেট খুলে দেয়।নিলা আকাশকে ডাক দেয়,
-“গাড়িতে এসো,কথা আছে”
আকাশ কেন যেন আনমনেই নিলার কথা মতো গাড়িতে উঠে বসলো।নিসানের ব্রান্ড নিউ গাড়ি।ভেতরে এসি,টিভি সবই আছে।আরাম দায়ক সিট।
আকাশ গাড়িতে উঠেই বলে বসে-
“আমি সিগারেট খাবো,আমাকে নামতে হবে”
নিলা উত্তর দেয়-
“আমার কাছে আছে,এই নাও”বলতে বলতে নিলা ওর ব্যাগ খুলে সিগারেটের প্যাকেট বের করে আকাশের দিকে এগিয়ে দেয়।আকাশ অবাক হয়ে নিলার দিকে তাকিয়ে থাকে।সে আসলে বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের চোখকে।কতটা বদলে গেছে নিলা।
আকাশ আর নিলার পরিচয় হয় ওদের ভার্সিটিতে।আকাশ তখন ফাইনাল ইয়ারে,আর নিলা সবে মাত্র ভর্তি।নিলার ভার্সিটির নবীন বরনের দিনই আকাশের চোখ নিলার দিকে আটকে যায়।তারপর যত দিন যায় ভালোলাগা তত বাড়তে থাকে।দু’জন একই সাবজেক্টের স্টুডেন্ট ছিল।তাই নিজেদের মধ্য একটু আধটু পরিচয়ও ছিল।আকাশ ছিল অনেক মেধাবী ছেলে।নিলার কোন সমস্যা হলেই আকাশের কাছে চলে আসতো।আর আকাশো সেই সুযোগে গল্প লাগিয়ে ভালোই ভাব জমিয়ে ফেলতো।একসময় নিলা আপনি থেকে নেমে আসে তুমিতে।আর আকাশের মনে তৈরী হয় নিলার জন্য জায়গা।শুরুটা অনেক ভালোই ছিল।ভালোবাসা দিবসের দিন একটা গোলাপ হাতে হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে নিলাকে ডেকে বলেছিল-
“নিলা,আমি তোমাকে ভালবাসি”ব্যাস এখানে থেকেই শুরু।তারপর আর কি।নিলাও রাজি ছিল।চলতে থাকলো ভালোবাসার গল্প।প্রায় তিন বছর টানা তাদের সম্পর্ক রইলো।তারপর হঠাত একদিন রাতে একটা ফোন আসে আকাশের কাছে।ফোনে অপরপ্রান্তে নিলা,কাদো কাদো গলায় শুধু বলছিল,
-“আকাশ আমায় ক্ষমা করে দাও।আমি পারলাম না আকাশ।আমায় ক্ষমা করে দিও।”
আর,ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল নিলা আর আকাশের ভালোবাসার গল্প।তারপর নিলা আর ভার্সিটিতে আসেনি,ওর ফোন বন্ধ।বাড়ির ঠিকানাও জানে না আকাশ।একদিন ওর একবান্ধবীর কাছে শুনেছিল নিলা নাকি অনেক বড়লোক এক ছেলেকে বিয়ে করেছে।ওদের একসাথে ঘুরতেও দেখেছে নিলার বান্ধবী।শরত চন্দ্রের একটা লাইন ভেবে আকাশ শুধু নিজেকে সান্তনা দিল-“বড় প্রেম শুধু কাছেই আনে না,দুরেও ঠেলে দেয়।”তারপর থেকে আজ অবধী আকাশ একা।
হঠাত ফোন বেজে ওঠে নিলার “ক্রিং ক্রিং”।আকাশ তার পুরোনো ভাবনা থেকে ফিরে আসে।নিলা ফোনে কথা শেষ করেই আকাশের দিকে তাকায়।আকাশও ওর মুখের দিকে তাকিয়ে-
-“দেখা করবার জন্য ফ্যাশন শো কেন?”-সরাসরি প্রশ্নটা করেই বসলো আকাশ।
-“কারন অনেকের মাঝেই আমি নিরাপদ।”উত্তর দেয় নিলা।
-“ঠিক বুঝলাম না” আকাশ সন্দিহান নিলার আচরনে।
-“তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল!” নিলা আকাশকে বলে।
-“আমারো তোমার সাথে কিছু হিসাব মেলানো বাকি ছিলো” আকাশ উত্তর দেয়।
-“তুমি এখনও আমার প্রতি রেগে আছো আকাশ।আচ্ছা ঠিক আছে,আগে বাসায় চলো”
-“কার বাসায়?”আকাশ অবাক হয়ে ওঠে।
-“আমার!”নিলা উত্তর দেয়।
-“তোমার স্বামী?” কৌশলে আকাশ নিলার স্বামীর কথা জানতে চায়।
নিলা শুধু উত্তরে তার সাদা শাড়ি দেখায় আকাশকে।