
৪
নিলার নিশান গাড়িটা বেশ দ্রুত রাতের নিস্তব্ধতাকে ছাপিয়ে এগিয়ে চলছে।আকাশ গাড়ির জানালা দিয়ে ওর অবস্থান বোঝার চেস্টা করছে।নিলার গাড়ি রামপুরা,বাড্ডা হয়ে সোজা এগিয়ে চলছে।লিংক রোড পার হতেই আকাশ ধরে নেয় নিলার বাড়ি বসুন্ধরা নয়তো উত্তরায় হবে।প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট পর নিলা আর আকাশ পৌছে যায় নিলার বাড়িতে,উত্তরায়।বেশ বড় বাড়ি।বাহির থেকেই বোঝা যায় সম্ভবত ডুপ্লেক্স বাড়ি।নিলার স্বামী নিলাকে অনেক টাকা পয়সা দিয়ে গেছে এটা নিশ্চিত আকাশ।ভেতরে ঢুকতেই আকাশের চোখ আটকে যায়,এত সুন্দর বাড়ি সে তার কল্পনায়ও দেখেনি।বাড়ির অনেক জায়গাতেই নিলা আর তার স্বামীর ছবি।এক জায়গায় নিলা আর ওর স্বামীর বিয়ের ছবি দেখে আকাশের মন খারাপ হয়ে যায়।নিলা পেছন থেকে আকাশকে ডাক দেয়,
“এদিকে এসো!”
নিলার পেছন পেছন আকাশ চলে আসে।দুজন সোফায় বসে পরে।
“আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছো?”আকাশ জিজ্ঞাসা করে নিলাকে।
“তার আগে কি তুমি জানতে চাইবে না সেদিন আমার সাথে কি হয়েছিল?”
“না”-উত্তর দেয় আকাশ।
“চা খাবে?”-নিলা জিজ্ঞাসা করে আকাশকে।“চলো,চা খেতে খেতে কথা বলি”
নিলা ভেতরের কালাম নামে একজনকে ডাক দিয়ে চায়ের কথা বলে।নিলার বাসায় এই প্রথম কোন ব্যক্তিকে দেখলো আকাশ।সম্ভবত এ নিলার কাজের লোক।চায়ের কথা বলে নিলা আবার আকাশের সাথে কথা বলতে শুরু করে,
-“তোমার মনে পরে আকাশ,তুমি আগে সল্ট টি খেতে?”
-“এখনও খাই মাঝে মাঝে,যখন খুব বেশী গ্রামের কথা মনে পরে!” আকাশ উত্তর দেয়।
আকাশের গ্রাম সমুদ্রর খুব কাছা কাছি।প্রায়ই তাকে সমুদ্রর নোনা পানির স্বাদ নিতে হতো চায়ে।আর তাই ঢাকায় যখনই ওর গ্রামের কথা মনে পরে তখনই ও চায়ের সাথে চিনির বদলে লবন মিশিয়ে মনে করার চেস্টা করে নিজের গ্রামকে।একদিন সাথীর সামনেও খেয়েছিল আকাশ।
নিলা এবার বলতে শুরু করে “আমি জানি আকাশ তুমি আমাকে অনেক ঘৃনা করো এখন,আসলে ঘৃনা করাই উচিত।যেদিন রাতে আমি তোমাকে ফোন দেই তার দুই দিন আগে আমার একটা ফোন আসে।বাবা ফোন করে বলে সে খুব অসুস্থ।আমি গ্রামে চলে যাই।গিয়ে দেখি বাবা বিছানায় শোয়া আর তার পাশে আমার স্বামী রাহুল বসে আছে।রাহুল আমাকে অনেক পছন্দ করতো।আমার চাচাতো ভাই।জুয়ার ব্যবসা,নারী পাচার আরো অনেক বাজে কাজ করে অনেক বড়লোক হয়ে যায় সে।বাবার চিকিতসা দরকার ছিল।কিন্তু টাকা ছিল না আমার কাছে।আমি একমাত্র সন্তান বাবা মায়ের।এমন সময় রাহুল আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।আমি রাজি হইনি,বরং ওর গালে চর দিয়ে বসি।পরদিন রাতে আমি বাবাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে আসছিলাম।রাহুল বাবাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে কথা আছে বলে রেখে দেয়।তারপর....তারপর....আমাকে ওর কতগুলো লোক দিয়ে নিয়ে যায় একটা বাড়িতে।তারপর....তারপর...ও আমাকে.....”
“চুপ করো!” চিতকার করে ওঠে আকাশ।ওর চোখে পানি।
নিলা কাদো কাদো গলায় আবারো বলে ওঠে,
-“এত কিছুর পরও ও আমাকে বিয়ে করতে চাইলো।আমি ভেবে দেখলাম আমার জীবন তো নস্ট হয়েই গেল,তোমার জীবন নস্ট করে কি লাভ?আর বাবার চিকিতসা দরকার ছিল।তাই আমি রাহুলকে বিয়ে করেছি।তুমিই বলো আমি কি অন্যয় করেছি?”
নিলা মাথা নিচু করে কাদতে থাকে।
-“রাহুল মানে তোমার স্বামী কি করে মারা গেল?”-জিজ্ঞাসা করে আকাশ।
-“শ্বাস কস্টের রোগী ছিল।একদিন পাম্প খুজে পায়নি।তাই...”উত্তর দেয় নিলা।
-“খুজে পাইনি নাকি খুজতে দেওনি?” সরাসরি জিজ্ঞাসা করে আকাশ নিলাকে।
-“মানে?” আকাশের এমন প্রশ্ন শুনে থমকে যায় নিলা।
-“কারন তুমি রাহুলকে ভালোবাসতে না,আর প্রতিশোধের আগুন কোন দিন নেভে না!আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি নিলা?”
-“করো”
-“তুমি কি এখনো আমাকে...”
কথার মাঝপথে চলে আসে কামাল।হাতে চায়ের ট্রে।ওকে দেখে দুজন চোখ মুছে ঠিক হয়ে বসে।কামাল আকাশের দিকে চায়ের একটা কাপ এগিয়ে দেয়।তারপর নিলার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“ম্যাডাম,আপনার সল্ট টি”
আকাশ অবাক হয়ে তাকায় নিলার দিকে,সে তার উত্তর পেয়ে গেছে।