৫:০৯ AM





দুপুর বারোটা বাজে
আকাশের ঘরে আকাশ ঘুমিয়েজানালার ফাক দিয়ে চোখে আলো লাগতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়কিন্তু বিছানা থেকে উঠতে পারছে না সেমাথার পেছনটায় প্রচন্ড ব্যথাকাল রাতে যে পোশাক পরে ছিল সেটাই পরে আছে এখনোকিন্তু কাল রাতে ও বাসায় এলো কখন? ও তো নিজে বাসায় আসেনিকিভাবে আসলো বাসায়?রাতের ঘটনা মনে করতে চেস্টা করলো আকাশভয়ংকর সময়টা মনে করতেই গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে

রাতে নিলার বাসায় সোফায় বসে চা খেতে খেতে নিলা তার ব্যাগ থেকে বের করে আকাশকে একটা জিনিস দিয়েছিলএকটা ঘড়িঘড়িটা অনেক দামীএখনও পরে আছে সেটা আকাশনিলা নিজ হাতেই পরিয়ে দিয়েছিল এটাঘড়িটা দেয়ার পর নিলা শুধু বলেছিল,
-“
এটাই আমার মৃত্যর জন্য দায়ী থাকবে,সময় হলে এটাই সব প্রশ্নের উত্তর দেবে তোমাকে আকাশ
নিলা কথা শেষ হলে আকাশ কিছু জিজ্ঞাস করার আগেই কেউ একজন আকাশকে প্রচন্ড জোরে আঘাত করেসম্ভবত ধাতব কিছু দিয়েনিলা চিতকার দেয়তারপর সমস্ত দুনিয়া ঝাপসা হয়ে আসে আকাশেরজ্ঞান হারিয়ে ফেলে আকাশ

ড্রয়িং রুমে যেতেই খেয়াল করলো দরজা খোলাদরজা লাগাতে গিয়ে দেখলো বাইরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে বাংলাদেশী ইন্টারপোল অফিসার আজাদ শেখআজাদ শেখ প্রায় কয়েক মাস ধরেই ঢাকায় আছেএকটা তদন্তের কাজে এসেছে সেকিন্তু সে আকাশের কাছে কি চায়? আকাশকে দরজার কাছে আসতে দেখেই ফোন রেখে আজাদ শেখ বলতে থাকে,
-“
মি.আকাশআল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ যে আপনার জ্ঞান ফিরেছে
-“
আপনি এখানে কি করছেন?” সরাসরি প্রশ্ন করে আকাশ
-“
যেখানে বি.এস.এস এতটা এগিয়ে গেছে সেখানে ইন্টারপোল কি করে বসে থাকে বলুন

আজাদ শেখের মুখে কথাটা শুনেই আকাশের হৃতপিন্ডের পানি সংকট দেখা দেয়আকাশ বাংলাদেশ সিক্রেট সার্ভিসের একজন উর্ধতন অফিসারপ্রায় তিন মাস যাবত সে হন্য হয়ে খুজছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী আর বাংলাদেশের চোরাচালানের প্রধান মির্জা আকবরকেযে কিনা এম.এ নামে পরিচিতশেষ খবর পাওয়া যায় এম.এ রেডিয়ান অয়েল নামে একটা কোম্পানি কিনেছেআকাশ সেখানেই কাজ করছিল এতদিন তথ্য সংগ্রহের জন্যকিন্তু বি.এস.এস থেকে এই তথ্য কি করে ফাস হলো?

আকাশকে কিছু বলতে না দেখে আজাদ শেখ কথা বলতে শুরু করে,
-“
অবাক হবার কিছু নেই মি.আকাশইন্টারপোল একটা সোজা হিসেব কসেছিল মাত্রআর তা মিলে গিয়েছে হুবহু
-“
মানে?কিসের হিসেব?”আকাশ এখনো অবাক
-“
বাংলাদেশের ক্রাইম জগতে যে কাজ গুলো হচ্ছে তার মধ্য সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ড্রাগস আমদানীআর এই ড্রাগস গুলো আসছে নদীপথে,তাও আবার জাহাজেখবরটা এফ.বি.আই বের করেছিলআর এই খবরটা এফ.বি.আই থেকে জানে বি.এস.এসকিন্তু বি.এস.এস এর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি এ ব্যপারেএরকম একটা কথা বি.এস.এস চীফ মাসুদ রানাকে জানায়নিকারন মাসুদ রানা নিজেই এখন রানা এজেন্সীর কাজে সুইডেনেতাহলে কি হাত পা গুটিয়ে রেখেছে বি.এস.এস?”কথা বলতে বলতে সিফারেট ধরায় আজাদ শেখতারপর আবার বলতে শুরু করেন,
মাসুদ রানার পরে এরকম একটি কাজ যদি কাউকে এই মূহুর্তে দেয়া যায় সেটা হচ্ছেন আপনি,আকাশ রহমান,AR10আকাশ রহমানের কথা অনেকেই জানত নাতবে কয়েক মাস আগে প্যারিসে যে ভুমিকম্প হয়েছিল সেটা যে আসলে একটা অস্ত্রের পরীক্ষা ছিল তা জানত ইন্টারপোলআর সেই অস্ত্র ধ্বংস করেছিল এ.আর-১০ এটাও ইন্টারপোল জানেকয়েকমাস ধরে এই আকাশ রহমান কোন কাজে নেই,ব্যপার কি?ইন্টারপোল তারপর বের করে,আকাশ রহমান একজন কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরী করছেন রেডিয়ান অয়েল কোম্পানিতে,যা কিনা এম.আর বা মির্জা আকবরেরআর এফ.বি.আই এর ধারনা অনুযায়ী এই রেডিয়ান অয়েল তেলের নামে সমুদ্র পথে আনছে ড্রাগস গুলো

-“
হুমমবুঝলাম,ইন্টারপোল অনেক এগিয়েআকাশ এবার কথা বলে ওঠেকিন্তু আমাকে কি কাল রাতে আপনি বাসায় নিয়ে এসেছেন?”

-“
হ্যা,ইন্টারপোল প্রায় একসপ্তাহ ধরে আপনার দিকে নজর রাখছিলকিন্তু কাল রাতে আপনাকে ফ্যাশন শোতে যেতে দেখে ভেবেছিলাম হয়তো একটু এন্টারটেইনমেন্ট খুজছেনপরে দেখলাম শো শেষ হবার আগেই আপনি আর নিলা বের হয়ে এলেন
-“
আপনি নিলাকে কি করে জানলেন?”প্রশ করে আকাশ
-“
বলছিজবাব দেয় আজাদ শেখ, “রাতে মিস নিলার বাসায় মিস নিলা আর আপনি ঢোকার প্রায় আধ ঘন্টা পর একটা গাড়ি আসেতারা ভেতরে ঢুকতেই কিছুক্ষন পর একটা গুলির আওয়াজ আসেতার পর ওই দুজন একটা বডি নিয়ে বের হয়ে গাড়িতে ওঠেআমাদের একজন বাড়ির ভেতরে ঢোকে আর আমি জানি ঐ দুজনের গাড়ির পেছনেকিছুদুর যেতেই ওরা বডিটাকে ফেলে দেয়সেই বডিটা ছিল আপনারকথা শেষ করেই সিগারেটটা জানালা দিয়ে ফেলে দেয়
-“
এক মিনিট! আপনি বললেন গুলি চলেছিল,কিন্তু আমার তো গুলি লাগে নিতার মানে?” আকাশ কিছুটা উদ্দিগ্ন তার মানে কি নিলা?”
-“
হ্যা,ঠিক ধরেছেনমিস নিলা খুন হয়েছেউত্তর দেয় আজাদ শেখ
আকাশের মাথা আবার ঘুরতে শুরু করেছেচোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছেতবুও নিজেকে সামলে নেয় আকাশআকাশ জিজ্ঞাস করে, “কিন্তু,নিলাকে কেন? ও তো কোন দোষ করেনি
-“
মি.আকাশ,মিস নিলা আসলেই নির্দোশ ছিলেনতবে ধারনা করা যায় মিস নিলা এমন কিছু জানতেন যা মির্জা আকবরের ক্ষতির কারন হতে পারে
-“
মির্জা আকবরের সাথে নিলার কি সম্পর্ক?”আকাশ জানতে চায় আজাদ শেখের কাছে
-“
মিস নিলার স্বামী রাহুল ছিল মির্জা আকবরের বিজনেস পার্টনার,আর রাহুল মারা যাবার পর নিলা হয় মির্জা আকবরের বিজনেস পার্টনারকিন্তু মিস নিলা কোন ধরনের স্মাগলিং এর কাজ করতে চাইতেন নাআর এটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় মিস নিলার জন্য

এবার আকাশের কাছে সব কিছু একটু একটু পরিস্কার হতে শুরু করেতার মানে নিলা জানতো যে আকাশ বি.এস.এস এজেন্টনিলা নিশ্চই আকাশকে কিছু বলতে চাচ্ছিলকি বলতে চাচ্ছিল নিলা?আর এম.এ কি আকাশের ওপর নজর রাখছে? তা না হলে কি করে জানলো যে কাল রাতে নিলা আকাশকে সব কিছু বলতে যাচ্ছে? যদি তাই হয় তবে আকাশ এখন আর নিরাপদ নয়আকাশ এবার আজাদ শেখের দিকে তাকায়,
-“
ইন্টারপোল কি বি.এস.এস এর সাথে কাজ করতে চায়?”আকাশ জিজ্ঞাসা করে আজাদ শেখকে
-“
ইন্টারপোল বি.এস.এস এর সাথে কাজ করতে চায়,তবে আমি আর থাকছি নাউত্তর দেয় আজাদ শেখ
-“
কেন?”
-“
কারন,আমার ওপর নজর রাখতে শুরু করেছে এম.এতাই আমাকে চলে যেতে হচ্ছেতবে হ্যা,ইন্টারপোল এর নতুন এজেন্ট আসবেউত্তর দেয় আজাদ শেখ
-“
কে সে?”জানতে চায় আকাশ
-“
এলেই জানতে পারবেনকথাটা বলে দরজা দিয়ে বের হয়ে যায় আজাদ শেখ

আকাশ এবার মনে মনে একটা অঙ্ক কষতে শুরু করলোমির্জা আকবর বি.এস.এস এর কাছ থেকে কোন খবর পায়নি,খবর পেয়েছে ইন্টারপোল থেকেআর ইন্টারপোল কাজ করছিল আকাশের পেছনে পেছনেতাই আকাশের সব খবর পাচ্ছিল এম.এ বা মির্জা আকবরনিলা মির্জা আকবরের কাছ থেকে জানতে পারে আকাশ সম্পর্কেআর তাই নিলা আকাশের কাছে এসেছিল কিন্তু কে দিয়েছে খবর গুলো ইন্টারপোল থেকে? কেন এতদিন রেডিয়ান অয়েলে কাজ করলেও মির্জা আকবর সব কিছু জেনেও কোন কিছু করেনি আকাশকে? অনেক প্রশ্ন থেকে যায় আকাশের মনেতবে একটা জিনিস স্পস্ট,মির্জা আকবর শেয়ালের চেয়েও ধূর্ততাকে খাচায় বন্দি করা যতটা সহজ ভেবেছিল ততটা সহজ নয়